একুশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে নেমেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের অনুরোধে কানাডার পুলিশ শুক্রবার সে দেশে এসএনসি-লাভালিন (আরসিএমপি) গ্রুপের একাধিক অফিসে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে তল্লাশি চালায়। দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র উদ্ধারে এ অভিযান
চালানো হয় বলে সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংক এক দশমিক ২ বিলিয়ন (প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা) ঋণ সহায়তা দিচ্ছে, যা সেতুর মোট ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। কানাডার এসএনসি-লাভালিন পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নের পরামর্শক নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মনসেল-এইকমের সঙ্গে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। এর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের এসিই কনসালট্যান্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সম্পৃক্ততার কথা প্রচার হলেও গতরাতে আমার দেশ-এর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে মন্ত্রী তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। মনসেল-এইকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পদ্মা সেতুর বিভিন্ন অংশের নকশা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানটি চুক্তির পুরো টাকা উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং আরও প্রায় ৭০ কোটি টাকা বাড়তি দাবি করে। এ নিয়ে তখনই প্রশ্ন ওঠে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘কাজ না করেই টাকা উত্তোলন’ শিরোনামে গত ডিসেম্বরে লিড স্টোরিও ছাপা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি এসএনসি-লাভালিন পদ্মা সেতুর সুপারভিশনের জন্য একটি টেন্ডারে অংশ নেয়। টেন্ডার কমিটির অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংকের স্বীকৃতির পর্যায়ে আছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ইন্টারনেট সংস্করণসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম গতকাল পদ্মা সেতুর টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতির অনুসন্ধানে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের অনুরোধে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) এসএনসি-লাভালিন অফিসে তল্লাশির খবর প্রচার করে। নিউইয়র্কের ডেটলাইনে রয়টার্সের খবরে বিশ্বব্যাংকের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, ব্যাংকের এক দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের সহযোগিতায় নির্মিতব্য বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর সম্ভাব্য দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে কানাডা কর্তৃপক্ষ। খবরে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, কানাডীয় পুলিশ এসএনসির বিভিন্ন অফিসে তাদের তল্লাশির বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। অন্যদিকে এসএনসি-লাভালিনের একজন মুখপাত্র লেসলিন কুইনটন বলেছেন, কানাডীয় কর্তৃপক্ষকে তারা সহযোগিতা করছেন। এদিকে কানাডীয় পুলিশের মুখপাত্র জুলি মরেলের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, দুর্নীতির তদন্তের অংশ হিসেবেই সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে তারা এসএনসি-লাভালিনের অফিসে তল্লাশি চালিয়েছেন। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে এখনও চার্জশিট দাখিল করা হয়নি।
যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে গতরাতে টেলিফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসএনসি-লাভালিন পদ্মা সেতুর একটি সুপারভাইজরি কাজের জন্য দরপত্র জমা দিয়েছে। টেন্ডার সাব-কমিটি হয়ে এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা তো এখনও তাদের কাজ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করিনি। টেন্ডার কমিটি থেকে বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের কাছে গেছে। তাদের অনুমোদন পেলেই পারচেজ কমিটি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মিলবে। এ টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত বিশ্বব্যাংক করছে বলে তার জানা নেই। আর নকশা প্রণয়নের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ছিল মনসেল-এইকম। আমরা তাদেরই চিনি। তাদের সঙ্গে এসএনসি-লাভালিন গ্রুপের সম্পৃক্ততার কথা তার জানা নেই বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। যোগাযোগমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি আপাদমস্তক একজন সত্ ব্যক্তি। তিনি জানান, বিএনপি প্রথম যখন ক্ষমতায় আসে তখন তাকে দুর্নীতি দমন ব্যুরো সত্ বলে একটি সার্টিফিকেট দিয়েছিল। আবার ওয়ান ইলেভেনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন সত্ বলে তাকে আরও একটি সার্টিফিকেট দিয়েছে। সত্ ব্যক্তি হিসেবে এ রকম দুটি সার্টিফিকেট বাংলাদেশের আর কারও আছে মনে হয় না বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমি একজন নির্দোষ ব্যক্তি। পদ্মা সেতুর সব টেন্ডার ও কাজ স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে করা হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment