মাত্র ছয় বছর বয়সী বাংলাদেশী বালক ওয়াসিক ফারহান রূপকথা বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ কম্পিউটার প্রোগ্রামারের পদবীটি দখল করে বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। শিরোনাম হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের। দি নিউইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন, ক্যালিফোর্নিয়া অবজারভার, এস্টেট নিউজ, চিল্ড্রেন পোস্ট এবং আরো অনেক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট তাকে বিশ্বে সর্বকনিষ্ঠ কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসাবে অভিহিত করেছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিশ্বনন্দিত টিভি অনুষ্ঠান ‘রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নট’ তার বাবা-মা’কে সম্প্রতি অবহিত করে যে রিপ্লিস তাদের নতুন বইতে রূপকথার নাম অন্তর্ভুক্ত করবে। এবছরের সেপ্টেম্বরে বইটি বিশ্বব্যাপী বইয়ের দোকানগুলোতে পাওয়া যাবে। তার বাবা-মা এ ব্যাপারে রিপ্লিস-এর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন। ছয় বছরের এই বয়সে অধিকাংশ শিশু যখন খেলনাপত্র নিয়ে খেলাধুলা করে তখন রূপকথা তার নিজস্ব কম্পিউটার সিস্টেম (উইন্ডোসসহ) তৈরি করে এবং একজন বিশেষজ্ঞের মতো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করে।
জন্মগতভাবে মেধাবী রূপকথার বাসা রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকায়। অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র সাত মাস বয়স থেকেই সে কম্পিউটার নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে এবং মাত্র দুই বছর বয়সে সে কম্পিউটারে লেখালেখি করা শিখে ফেলে। তার গর্বিত মা সিন্থিয়া ফারহিন রিসা একথা জানান। তিনি বলেন, “এই বিস্ময় বালক প্রতিদিন ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় কম্পিউটারের পেছনে ব্যয় করে এবং গেম-এর কারেক্টর কিভাবে পরিবর্তিত হয় তা জানার চেষ্টা করে।” কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ (সি এন্ড সি++)-এর ওপর তার চমৎকার কমান্ড রয়েছে বলে তিনি জানান। প্রথম দিকে তার বাবা-মা তাকে কম্পিউটারে গেম খেলা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। তারা মনে করতেন বেশি সময় কম্পিউটারের সামনে থাকলে তার চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তার মা রিসা বলেন, “একথা বলায় সে ভাঙচুর, হৈ-হুল্লোড় করে এবং খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। অবশেষে আমরা তাকে কম্পিউটারে খেলার অনুমতি দিতে বাধ্য হই। এখন সে প্রতিদিন ১২/১৩ ঘণ্টা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।” টাইপ করা তার জন্য একটি সাধারণ ব্যাপার। কিবোর্ড না দেখে সে দক্ষ টাইপিস্টের টাইপ করতে পারে। রূপকথা যে কোনো ছবি এডিট করতে পারে।
তিনি জানান, জন্মের পর থেকেই কম্পিউটারের প্রতি তার সন্তানের আগ্রহ শুরু হয়। কম্পিউটারের মনিটরের দিকে সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত কম্পিউটারের সুইচ অন না করা পর্যন্ত সে খেতে চাইত না। তিনি বলেন, “রূপকথা কখনও আইটি’র ওপর কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেনি এবং কারো কোন সাহায্য ছাড়াই সে সবকিছু শিখেছে।” তার মা জানান, সে ইতোমধ্যেই সাত শতাধিক গেম খেলেছে এবং অনেক জটিল গেমও খেলতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন ইমিউলেটর ব্যবহার করে সে সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে পারে। সে অপারেটিং সিস্টেম সেটআপ দিতে পারে এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি সারতে পারে। পাঁচ সহস্রাধিক ইংলিশ ওয়ার্ড সে জানে এবং তা দিয়ে সে বাক্য রচনা করতে পারে। রূপকথা ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারে এবং কারো সাহায্য ছাড়াই ই-মেইল পাঠাতে পারে। যেকোনো ওয়েবসাইটে সে ঢুকতে পারে। হার্ডওয়্যার সম্পর্কেও তার ভালো জ্ঞান রয়েছে। পাশাপাশি এমএস ওয়ার্ড, উইন্ডোজ এক্সপি, পাওয়ার পয়েন্ট, এ্যাঙ্গাল এবং ফটোশপ-এর তার চমৎকার কমান্ড রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস) সম্প্রতি তাকে একজন সর্বকনিষ্ঠ কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসাবে সংবর্ধনা দিয়েছে।
মিডিয়াসফট-এর প্রোগ্রামার ও প্রজেক্ট ম্যানেজার আকসাদুর রহমান বলেন, “প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমি অবশ্যই বলতে পারি যে রূপকথা এক বিস্ময় বালক। কম্পিউটারে তার দক্ষতা দেখে আমি অবাক।” রূপকথার ব্যবসায়ী বাবা ওয়াসিম ফারহান ও মা রিসা আশা প্রকাশ করেন যে তাদের ছেলে ভবিষ্যতে একজন বড় প্রোগ্রামার হবে এবং সাইবার জগতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। সূত্র: বাসস
No comments:
Post a Comment