স্যামসন এইচ চৌধুরীকে অনুসরণ করলে সৎ ও আদর্শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব- এভাবেই স্কয়ার গ্র“প প্রতিষ্ঠাতাকে স্মরণ করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
তার সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়টি স্মরণ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শনিবার বলেন, “সরকারি চাকরি করার সময় থেকেই তার...
সঙ্গে আমার পরিচয়। বিশেষ করে, ১৯৮২ সালে যখন জাতীয় ওষুধ নীতি তৈরি করা হয়, সেটি বাস্তবায়নে তার অনেক অবদান ছিল। এই শিল্পটিকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। বিশেষ করে দেশীয় পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে তিনি এই শিল্পকে আন্তজার্তিকভাবে পরিচিত করে তুলেছেন।”
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি সালমান এফ রহমান বলেন, “স্যামসন এইচ চৌধুরীর একক অবদান হলো, বর্তমানে ৯৯ ভাগ ওষুধ দেশেই তৈরি করা হয়। ৮৪টা দেশে ওষুধ রপ্তানি হয়। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র তার কঠোর পরিশ্রমের কারণে।”
‘দ্য বিজনেস লিজেন্ড’ অভিহিত করে সদ্য প্রয়াত উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি স্যামসন চৌধুরীর স্মরণে শনিবার এ সভা আয়োজন করে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ পাঁচ সংগঠন। এগুলো হলো- ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই),) মেট্টোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “সততার কারণে একজন ব্যবসায়ী হয়েও তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন হয়েছিলেন।”
ডিসিসিআই সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, “স্যামসন এইচ চৌধুরীর কাছ থেকে এই প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের যেন আর ঋণখেলাপী বলা না হয়, আমাদের যেন পুঁজিবাজার ধ্বংসের জন্য দায়ী করা না হয়, আমাদের যেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা না হয়, আসুন স্যামসন এইচ চৌধুরীর কাছ থেকে আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করি।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ স্মরণসভায় এমসিসিআই সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমজাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “স্যামসন দাদা প্রত্যেকের বিপদে, দরকারে এগিয়ে যেতেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে তার ব্যবহার ছিল অত্যন্ত আন্তরিক।”
এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ বলেন, এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী বুলেটিনটি স্যামসন এইচ চৌধুরীর নামে উৎসর্গিত হবে। যে কেউ সেখানে তার বিষয়ে লিখতে পারবেন।
সভায় স্যামসন এইচ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ গঠনের প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ফরাশউদ্দিন আহমেদ।
স্মরণসভায় আরো বক্তব্য দেন- ব্যারিস্টার রফিক উল হক, রেহমান সোবহান, এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি আনিসুল হক ও মীর নাসির হোসেন, ট্রান্সকম গ্র“পের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান, সাবেক উপদেষ্টা মাহবুব জামিল, বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ।
সভাশেষে বাবার প্রতি এ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান স্যামসন এইচ চৌধুরীর ছেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা তপন চৌধুরী।
তিন ঘণ্টাব্যাপী এই স্মরণসভায় দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা ছাড়াও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৬ বছর বয়সে মারা যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।
১৯২৬ সালের ২৫ ফেব্র“য়ারি পাবনার আতাইকুলা গ্রামে তার জন্ম। বাবা ছিলেন ডিসপেনসারির মেডিক্যাল অফিসার। স্যামসনও ব্যবসায় আসেন ওষুুধ শিল্পের মাধ্যমে।
ভারতে পড়ালেখা শেষ করে ১৯৫২ সালে গ্রামে ফিরে ছোটো একটি ওষুধের দোকান খোলেন তিনি। পরে চার বন্ধু মিলে ১৯৫৮ সালে গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
স্যামসন এইচ চৌধুরীর অক্লান্ত চেষ্টায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের পাশাপাশি প্রসাধনসামগ্রী, টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও মিডিয়াতেও বিস্তৃত হয় স্কয়ার। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে স্কয়ারের পণ্য।
No comments:
Post a Comment