সালিশে অপবাদ ও শাস্তি দেওয়ায় চার সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন এক মা। এতে ওই মা ও তার দুই সন্তান মারা গেছে। গুরুতর অবস্থায় অন্য দুই সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহপুর রেলস্টেশনের কাছে গতকাল ভোরে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল 'সময়'-এর এক ক্যামেরাম্যানসহ তিন যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, রেললাইনে দাঁড়িয়ে তারা অন্যমনস্ক হয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মাধবপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের গৃহবধূ ফেরদৌসী আক্তার (৩০) তার চার সন্তানকে দুই হাতে জড়িয়ে ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। ঘটনাস্থলেই মেয়ে বন্যা (৭) ও তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যায় ছেলে জীবন মিয়া (১১)। আহত অন্য দুই সন্তান ঝর্ণা (৫) ও শাওন মিয়াকে (৯) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, ১৩ বছর আগে সুলতানপুর গ্রামের জিলন মিয়ার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ফেরদৌসীর বিয়ে হয়। এর পর জিলন মিয়া কর্মসূত্রে সৌদি আরব যান। পারিবারিক কলহের কারণে এ আত্মহুতির ঘটনা ঘটতে পারে।
তবে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জিলন মিয়া দুবাই যাওয়ার পর প্রতিবেশী আবদুল কাদির ফেরদৌসীর 'বাজার সদাই' করে দিতেন। তিনি নিয়মিত তার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু বিষয়টি আড় চোখে দেখতে শুরু করেন এলাকাবাসী। তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কেরও অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সম্প্রতি একই গ্রামের মহব্বত খাঁর বাড়িতে সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে ফেরদৌসী ও আবদুল কাদিরকে কান ধরে উঠবস করানো হয়। ফেরদৌসীকে তওবা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর এক ঘরে হয়ে পড়েন তিনি। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে বাবার বাড়ি বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়া গ্রামে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হন।
ফেরদৌসীর বড় বোন আমেনা বলেন, 'অপবাদ সইতে না পেরেই আমার বোন আত্মহত্যা করেছে।' ভাই বাছির বলেন, 'যাদের কারণে আমার বোনের এ পরিণতি, তাদের বিচার চাই।'
প্রসঙ্গত, সালিশে শাস্তির বিষয়ে হাইকোর্টের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে এখনো সালিশ বিচারের নামে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
ওইদিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আনালিয়া বাড়ি এলাকায় গতকাল ভোর ৫টার দিকে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন তিন যুবক। ধারিন্দা রেলস্টেশনের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি মো. হেলালুল ইসলাম জানান, 'লালমনিরহাট থেকে ঢাকাগামী একটি বাস আনালিয়া বাড়ি এলাকায় এলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ অবস্থায় সেখানে বাসটি থামিয়ে মেরামত করা হচ্ছিল। তখন কয়েকজন যাত্রী নেমে রেললাইনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনিরহাট এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে তিন যুবক মারা যান। তারা হলেন লালমনিরহাটের বকুল মিয়া (৩০), আমিনুল ইসলাম (২৪) ও আসাদুল ইসলাম (২৫)। এদের মধ্যে বকুল মিয়া লালমনিরহাটে সময় টিভির ক্যামেরাম্যান ছিলেন।
সুত্র ঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
No comments:
Post a Comment