মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল দুমড়ে-মুচড়ে দেয়ার পর দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর নিউইয়র্কে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় আইরিন। প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস আর প্রবল বৃষ্টিতে এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কের জনজীবন। শহরের গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে, অধিকাংশ এলাকায়...
বিদ্যুত্ নেই। হয়েছে জলোচ্ছ্বাস। সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনা, ফ্লোরিডা ও ভার্জিনিয়ায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, নিউজ ওয়ার্ল্ড নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় ৩০ লাখ লোক বিদ্যুিবহীন অবস্থায় রয়েছেন। সিটির নিম্নাঞ্চল বিশেষ করে ওয়েস্টসাইড হাইওয়ে কনি আইল্যান্ড, রকওয়ে এলাকায় ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। অনেক রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নিউইয়র্ক সিটি অনেকটা মৃত্যুপুরিতে রূপ নিয়েছে। যে সিটি কখনও ঘুমায় না বহুল প্রচলিত সেই প্রবাদ এবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে এখন পুলিশ ছাড়া সাধারণ মানুষের কোনো চলাচল নেই। সব দোকানপাট ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। প্রচুর গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। সারাক্ষণ মানুষের আনাগোনায় মুখরিত সিটির প্রাণকেন্দ্র টাইমস স্কোয়ারে দু’একটি পুলিশের গাড়ি ছাড়া কোনো জনমানব নেই। নিউইয়র্কের জনমানববিহীন এমন দৃশ্য দেখেননি সিটির ৭০ বছরের বাসিন্দা জ্যাক আইরিন। তিনি বললেন, এমন ভীতিকর অবস্থা এর আগে কখনও দেখিনি আমি।
শনিবার দুপুর থেকে নিউইয়র্ক সিটির সব সাবওয়ে বা পাতাল রেল এবং বাস সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে সাধারণের পক্ষে ঘরের আশপাশ ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ এক নির্বাহী
আদেশে নিউইয়র্ক সিটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে বের না হতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। সিটি কর্তৃপক্ষের নিষেধ উপেক্ষা করে খেলাচ্ছলে সি-বিচে গিয়েছে এমন কতিপয় ব্যক্তিকে জরিমানা করেছে পুলিশ।
সিটির নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ফর রকওয়ে, কনি আইল্যান্ড এলাকা থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার নাগরিককে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে বোস্টনগামী ৯ হাজার ফ্লাইট বাতিল করেছে। এর মধ্যে কেবল শনিবারে বাতিল করা হয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ ফ্লাইট। শনিবার থেকে নিউইয়র্কের বিখ্যাত জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে নির্দিষ্ট গন্তব্যের পথে আটকা পড়েছেন লাখ লাখ যাত্রী।
ওয়াশিংটন ডিসির রিগ্যান বিমানবন্দর, নিউজার্সির লিবার্টি এয়ারপোর্ট বন্ধ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাস সার্ভিস নেটওয়ার্ক গ্রেহাউন্ড নিউইয়র্ক পূর্বাঞ্চল থেকে তাদের সার্ভিস বাতিল ঘোষণা করেছে। তবে কোথাও কোনো বাংলাদেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
নর্থ ক্যারোলাইনাতে হ্যারিকেন আইরিন এরই মধ্যে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ৬ জন মারা গেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ব্রুকলিনের কনি আইল্যান্ডে প্রথম মৌসুমি ঝড় হিসেবে আঘাত হানে হ্যারিকেন আইরিন। এর প্রভাব সিটির বিভিন্ন অঞ্চলে ছিল দৃশ্যমান।
৭৮০ কিলোমিটার ব্যাপ্তির এ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল কেপ লুকআউটের কাছ দিয়ে নর্থ ক্যারোলাইনা উপকূল অতিক্রম করে স্থানীয় সময় শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার (বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টা) দিকে। প্রথম আঘাতেই বিদ্যুত্ সংযোগ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ঝড়ো বাতাস ও প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় বন্যা পরিস্থিতির। নর্থ ক্যারোলাইনা ও ভার্জিনিয়ার অন্তত ৬ লাখ মানুষ বিদ্যুিবহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সময় রাত ২টায় নিউইয়র্কে শুরু হয় ঝড়ের তাণ্ডব। এর আগেই নগর কর্তৃপক্ষ বাস সার্ভিস, সাবওয়ে ও বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়। নিউইয়র্কের নিচু এলাকা থেকে সরে যেতে বলা হয় সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি মানুষকে। ব্রুকলিন, কুইনস ও ম্যানহ্যাটনের অনেক অধিবাসীকেও সরে যেতে হয়।
আইরিন ‘বড় ও বিপজ্জনক’ ঝড় হতে পারে বলে আগেই সতর্ক করে দেয়ার পর নিউইয়র্ক, নরফোক ও ভার্জিনিয়াসহ বড় শহরগুলোর ২০ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ।
নিউ ইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ বলেন, আইরিনের আঘাতে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইরিনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ‘নজিরবিহীন’ হতে পারে। অবকাশ সংক্ষিপ্ত করে শনিবার ওয়াশিংটনে ফিরে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।
আইরিন আঘাত হানার আগেই রাজধানী ওয়াশিংটনসহ পূর্ব উপকূলের ৭টি রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, স্থলভাগে চলে আসায় আইরিনের ভয়াবহতার মাত্রা দ্বিতীয় ক্যাটাগরি থেকে প্রথম ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে। তারপরও ঝড়ের কেন্দ্রে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের প্রায় সব বড় শহরগুলোই আইরিনের আওতার মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে পূর্ব উপকূল ধরে ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে যাচ্ছে এ ঘূর্ণিঝড়।
এ বছর একের পর একে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিল করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে। বন্যা, টর্নেডো আর তাপদাহে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এরই মধ্যে ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আইরিনের আঘতে এ পরিমাণ আরও কয়েকশ’ কোটি ডলার বাড়বে বলেই ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।
নিরাপদে প্রবাসীরা : নিইউয়র্কে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর সবাই নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। বাংলাদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কাঠ দিয়ে প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিয়েছে। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীরা এরই মধ্যে সতর্ক ব্যবস্থা নিতে নিম্নাঞ্চল ছেড়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা, পার্কচেস্টার, জ্যাকসন হাইটস, চার্চ ম্যাকডোনাল এলাকা অবশ্য নিম্নাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত না হওয়ায় বাংলাদেশীরা তাদের বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তবে নিউজার্সির আটলান্টিক সিটিতে অবস্থানরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আটলান্টিক সিটি মেয়রের নির্দেশে এসব বাংলাদেশী বাড়িঘর ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।
জ্যামাইকার বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, দুর্যোগ হলেও কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ সুযোগে বিগত কয়েকমাসের ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। কারণ স্থানীয় বাসিন্দারা ঘরে খাবার, পানীয়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্টক করতে প্রতিযোগিতা করে বাজার করেছেন।
ওজন পার্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতা মিছবাহ আবেদীন বলেন, বিভিন্ন চেইন গ্রোসারিতে মানুষের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী বলেন, মাত্র ২০ ঘণ্টায় আমার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ডলার। স্বাভাবিক সময়ে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিদ্যুত্ নেই। হয়েছে জলোচ্ছ্বাস। সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনা, ফ্লোরিডা ও ভার্জিনিয়ায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, নিউজ ওয়ার্ল্ড নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় ৩০ লাখ লোক বিদ্যুিবহীন অবস্থায় রয়েছেন। সিটির নিম্নাঞ্চল বিশেষ করে ওয়েস্টসাইড হাইওয়ে কনি আইল্যান্ড, রকওয়ে এলাকায় ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। অনেক রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নিউইয়র্ক সিটি অনেকটা মৃত্যুপুরিতে রূপ নিয়েছে। যে সিটি কখনও ঘুমায় না বহুল প্রচলিত সেই প্রবাদ এবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে এখন পুলিশ ছাড়া সাধারণ মানুষের কোনো চলাচল নেই। সব দোকানপাট ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। প্রচুর গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। সারাক্ষণ মানুষের আনাগোনায় মুখরিত সিটির প্রাণকেন্দ্র টাইমস স্কোয়ারে দু’একটি পুলিশের গাড়ি ছাড়া কোনো জনমানব নেই। নিউইয়র্কের জনমানববিহীন এমন দৃশ্য দেখেননি সিটির ৭০ বছরের বাসিন্দা জ্যাক আইরিন। তিনি বললেন, এমন ভীতিকর অবস্থা এর আগে কখনও দেখিনি আমি।
শনিবার দুপুর থেকে নিউইয়র্ক সিটির সব সাবওয়ে বা পাতাল রেল এবং বাস সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে সাধারণের পক্ষে ঘরের আশপাশ ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ এক নির্বাহী
আদেশে নিউইয়র্ক সিটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে বের না হতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। সিটি কর্তৃপক্ষের নিষেধ উপেক্ষা করে খেলাচ্ছলে সি-বিচে গিয়েছে এমন কতিপয় ব্যক্তিকে জরিমানা করেছে পুলিশ।
সিটির নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ফর রকওয়ে, কনি আইল্যান্ড এলাকা থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার নাগরিককে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে বোস্টনগামী ৯ হাজার ফ্লাইট বাতিল করেছে। এর মধ্যে কেবল শনিবারে বাতিল করা হয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ ফ্লাইট। শনিবার থেকে নিউইয়র্কের বিখ্যাত জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে নির্দিষ্ট গন্তব্যের পথে আটকা পড়েছেন লাখ লাখ যাত্রী।
ওয়াশিংটন ডিসির রিগ্যান বিমানবন্দর, নিউজার্সির লিবার্টি এয়ারপোর্ট বন্ধ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাস সার্ভিস নেটওয়ার্ক গ্রেহাউন্ড নিউইয়র্ক পূর্বাঞ্চল থেকে তাদের সার্ভিস বাতিল ঘোষণা করেছে। তবে কোথাও কোনো বাংলাদেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
নর্থ ক্যারোলাইনাতে হ্যারিকেন আইরিন এরই মধ্যে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ৬ জন মারা গেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ব্রুকলিনের কনি আইল্যান্ডে প্রথম মৌসুমি ঝড় হিসেবে আঘাত হানে হ্যারিকেন আইরিন। এর প্রভাব সিটির বিভিন্ন অঞ্চলে ছিল দৃশ্যমান।
৭৮০ কিলোমিটার ব্যাপ্তির এ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল কেপ লুকআউটের কাছ দিয়ে নর্থ ক্যারোলাইনা উপকূল অতিক্রম করে স্থানীয় সময় শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার (বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টা) দিকে। প্রথম আঘাতেই বিদ্যুত্ সংযোগ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ঝড়ো বাতাস ও প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় বন্যা পরিস্থিতির। নর্থ ক্যারোলাইনা ও ভার্জিনিয়ার অন্তত ৬ লাখ মানুষ বিদ্যুিবহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সময় রাত ২টায় নিউইয়র্কে শুরু হয় ঝড়ের তাণ্ডব। এর আগেই নগর কর্তৃপক্ষ বাস সার্ভিস, সাবওয়ে ও বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়। নিউইয়র্কের নিচু এলাকা থেকে সরে যেতে বলা হয় সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি মানুষকে। ব্রুকলিন, কুইনস ও ম্যানহ্যাটনের অনেক অধিবাসীকেও সরে যেতে হয়।
আইরিন ‘বড় ও বিপজ্জনক’ ঝড় হতে পারে বলে আগেই সতর্ক করে দেয়ার পর নিউইয়র্ক, নরফোক ও ভার্জিনিয়াসহ বড় শহরগুলোর ২০ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ।
নিউ ইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ বলেন, আইরিনের আঘাতে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইরিনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ‘নজিরবিহীন’ হতে পারে। অবকাশ সংক্ষিপ্ত করে শনিবার ওয়াশিংটনে ফিরে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।
আইরিন আঘাত হানার আগেই রাজধানী ওয়াশিংটনসহ পূর্ব উপকূলের ৭টি রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, স্থলভাগে চলে আসায় আইরিনের ভয়াবহতার মাত্রা দ্বিতীয় ক্যাটাগরি থেকে প্রথম ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে। তারপরও ঝড়ের কেন্দ্রে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের প্রায় সব বড় শহরগুলোই আইরিনের আওতার মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে পূর্ব উপকূল ধরে ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে যাচ্ছে এ ঘূর্ণিঝড়।
এ বছর একের পর একে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিল করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে। বন্যা, টর্নেডো আর তাপদাহে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এরই মধ্যে ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আইরিনের আঘতে এ পরিমাণ আরও কয়েকশ’ কোটি ডলার বাড়বে বলেই ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।
নিরাপদে প্রবাসীরা : নিইউয়র্কে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর সবাই নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। বাংলাদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কাঠ দিয়ে প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিয়েছে। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীরা এরই মধ্যে সতর্ক ব্যবস্থা নিতে নিম্নাঞ্চল ছেড়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা, পার্কচেস্টার, জ্যাকসন হাইটস, চার্চ ম্যাকডোনাল এলাকা অবশ্য নিম্নাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত না হওয়ায় বাংলাদেশীরা তাদের বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তবে নিউজার্সির আটলান্টিক সিটিতে অবস্থানরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আটলান্টিক সিটি মেয়রের নির্দেশে এসব বাংলাদেশী বাড়িঘর ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।
জ্যামাইকার বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, দুর্যোগ হলেও কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ সুযোগে বিগত কয়েকমাসের ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। কারণ স্থানীয় বাসিন্দারা ঘরে খাবার, পানীয়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্টক করতে প্রতিযোগিতা করে বাজার করেছেন।
ওজন পার্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতা মিছবাহ আবেদীন বলেন, বিভিন্ন চেইন গ্রোসারিতে মানুষের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী বলেন, মাত্র ২০ ঘণ্টায় আমার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ডলার। স্বাভাবিক সময়ে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্র: দৈনিক আমার দেশ
No comments:
Post a Comment